সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৪১ পূর্বাহ্ন

চিলমারীতে উৎকোচ না দেয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত দেড় শতাধিক গ্রাহক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উৎকোচ না দেয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে চরাঞ্চলের দেড় শতাধিক গ্রাহক। স্থানীয়রা মনে করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের গাফলতির কারণে এমন অবস্থার তৈরি হয়েছে। উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নে ৩৯ কি.মি বিদ্যুৎ লাইন নির্মান পূর্বক ২৭ কি.মি. এলাকায় সংযোগ দেয়া হলেও পরিদর্শককে উৎকোচ না দেয়ায় বাকি ১২ কি.মি এলাকায় সংযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে চিলমারী উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নকৃত উপজেলা হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করা হয়। এ ঘোষনার পর উপজেলার চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নকে বিদ্যুতের আওতায় নেয়ার লক্ষে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন কল্পে জোড়গাছ ঘাট এলাকা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশ দিয়ে ৫ কি.মি পথে ব্যয়বহুল সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়। ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চল চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতী, বৈলমন্দিয়ার খাতা, কড়াই বরিশাল, ঢুষমারা, গাজীরপাড়া, বিশার পাড়া, আমতলা, ছালিপাড়া, যুগ্নিদহ, মানুষমারা ও আঠারোপাখি গ্রামসমুহে ৩৯ কি.মি. লাইন নির্মাণ করে পল্লী বিদ্যুৎ। নির্মিত ৩৯ কি.মি. লাইনের মধ্যে পল্লীবিদ্যুৎ চিলমারী জোনাল অফিসের পূর্ববর্তী ডিজিএম এর সময়ে ২৭ কি.মি এলাকায় ২ হাজার ২শ গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। বিদ্যুতের এসটি তার টানানো, সার্ভিস তার লাগানো ও বাড়ি ওয়ারিং করা হলেও পরিদর্শককে উৎকোচের অর্থ না দেয়ায় এখন পর্যন্ত বাকি ১২ কি.মি. এলাকায় মিটার সংযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে চিলমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমতলা এলাকায় ২২টি বাড়ি মানুষ, মারারচর এলাকায় ৩৮টি বাড়ি, আঠারো পাখি এলাকায় ৩৫টি বাড়ি ও যুগ্নিদহ এলাকায় ৪৫টি বাড়ি মিলে মোট ১৪০টি বাড়িতে বিদ্যুতের ওয়ারিং করা হয়েছে কিন্তু মিটার সংযোগ দেয়া হয়নি। ওই সমস্ত বাড়িতে ১বছর আগে এসটি তার ও সার্ভিস তার প্রদান করা হয়েছে এবং বাড়িগুলি ওয়ারিং করে তাদের জন্য ৬টি ট্রান্সফরমার বরাদ্দ করে এলাকায় প্রদান করা হয়েছে। টাকা পয়সা খরচ করে এতসব কাজ করেও অজানা কারনে দীর্ঘদিন পরেও তাদের মিটার প্রদান করা হয়নি। মানুষ মারারচর এলাকায় এহসানুল হক ও মোন্নাফ আলী ব্যাপারীর নামে দুইটি সেচের লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে কিন্তু বিদ্যুতের সংযোগ না দেয়ায় তারা কৃষি জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না।

মানুষ মারারচর এলাকার কামরুজ্জামান, আব্দুল্লাহ, হাফিজুর রহমান, আবু সায়েদসহ অনেকে জানান, বিদ্যুতের লাইন নির্মাণ হওয়ায় আমরা গরু মোটা-তাজা করনের প্রকল্প হাতে নিয়েছিলাম। সে মোতাবেক আমরা গরুও কিনেছি। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় আমরা গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় অতিরিক্ত গরমে গরু অসুস্থ হয়ে যাওয়া এবং চুরি-ডাকাতির ভয়ে কম মূল্যে দুইটি গরু বিক্রি করেছেন বলে জানান নওশাদ আলী নামের এক খামারী।

ওই এলাকার মো. এহসানুল হক, মমিনুল ইসলামসহ অনেকে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তারা কয়েক দফায় বর্তমান ডিজিএম এর নিকট গেলে তিনি পরিদর্শক লুৎফর রহমানকে পরিদর্শণ পূর্বক প্রতিবেদন প্রদান করতে বলেন। তারা আরও জানান, ওয়ারিং পরিদর্শক লুৎফর রহমান এলাকা পরিদর্শণে এসে বিভিন্ন ত্রুটি বের করেন এবং তার সহযোগী সাহেব আলীর মাধ্যমে মিটার প্রতি ১হাজার টাকা উৎকোচের দাবী করেন।টাকা দিলে দুই দিনেই মিটার সংযোগ দেয়ার কথা বলেন তারা। আমতলা এলাকার জাহাঙ্গীর আলম, সোহরাব আলী, মহেলা বেগম, রোকেয়া খাতুনসহ অনেকে জানান, তাদের বাড়ী ওয়ারিংসহ মিটার নেয়ার জন্য স্থানীয় তাজুল ইসলাম ও হাসানকে তারা ১ থেকে দেড় হাজার টাকা দিয়েছেন ৬মাস হলো। অদ্যাবধি তারা সংযোগ কিংবা টাকা কোনটিই পাচ্ছেন না।

তাজুল ইসলাম বলেন, সহজে বিদ্যুতের সংযোগ পেতে টাকা উত্তোলন করে তৎকালিন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুলকে ১৬হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি বদলী হয়ে যাওয়ায় কাজ ও টাকা কোনটিই পাচ্ছি না।

অভিযুক্ত পল্লী বিদ্যুৎ ওয়ারিং পরিদর্শক মো. লুৎফর রহমান উৎকোচের কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি কারো কাছে টাকা পয়সা চাননি। ওই এলাকায় বাড়ী ওয়ারিংয়ের কথা তার জানা নেই বলে জানান তিনি।

তৎকালিন সহকারী জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার মোক্তারুল ইসলাম বলেন, আমি কোন টাকা নেইনি। আমি ওই এলাকার গ্রাহকের বিদ্যুৎ প্রদানের জন্য সহযোগীতা করেছি মাত্র।

কুড়িগ্রাম লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুত সমিতির চিলমারী জোনাল অফিসের ডিজিএম প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ওই এলাকাসমুহে ওয়ারিং সম্পন্ন না হওয়ায় সংযোগ দেয়া হচ্ছে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com